প্রকাশিত: Sat, Feb 4, 2023 3:57 PM
আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 7:12 PM

যেভাবে সংকট মোকাবেলা করে জীবনে ফিরে আসা যায়

মোহাম্মদ বাছিত : ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হতে শুরু করেছিলো। ২০২১ সালে সবকিছু কেমন ভয়াবহ রূপ নিলো। কাছের কিছু আত্মীয়, সহকর্মী, বন্ধু হারিয়ে গেলো। একসময় মনে হচ্ছিলো, জীবন শেষ। আর কখনো হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবো না। শরীর এতোটাই খারাপ হয়ে গেলো, কোনো কিছু করার কোনো শক্তি পাচ্ছিলাম না। অনেক ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি, বলতে গেলে তেমন কোনো লাভ হয়নি। একসময় সুস্থ হওয়ার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলাম, তারপরেও কী মনে করে সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করতে থাকলাম। ধীরে ধীরে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করার চেষ্টা করলাম। ওষুধপত্র যতটা পারি কম খেতে চেষ্টা করলাম। করোনা পরিস্থিতিও একটু ভালো হতে শুরু করলো।

সমস্ত নেতিবাচক চিন্তা পরিহার করে ন্যাশনাল ইয়াং একাডেমী অব বাংলাদেশের কিছু প্রিয় সহকর্মী বিশেষ করে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ সামস, অধ্যাপক মাঞ্জুরুল করিম,  ড. মাইনুল, ড. সাব্রিনা-সহ আরও কয়েকজনের সাথে পরামর্শ করে তাঁদের সহযোগিতা নিয়ে কিছু কাজে নেমে পড়লাম। তরুণ শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের জন্য একে একে অনেকগুলো প্রোগ্রাম আয়োজন করলাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো, (ক) ইন্টারন্যাশনাল কলোকিয়াম অন অথেন্টিক সায়েন্টিফিক পাবলিকেশনস (খ) সামার স্কুল অন স্কিলস ডেভোলাপমেনট ফর সায়েন্টিফিক রাইটিং।  ইন্টারন্যাশনাল কলোকিয়ামের উদ্বোধনী বক্তা ছিলেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী এম জাহিদ হাসান। এই অনুষ্ঠানের পূর্বে তাঁর সাথে আমার ত্রিশ মিনিটের একটি আলোচনা হয়েছিল, বুঝতে পেরেছিলাম তিনি আমেরিকা থাকলেও তাঁর রয়েছে সীমাহীন দেশপ্রেম। 

উক্ত কলোকিয়াম শেষে বিশুদ্ধ বৈজ্ঞানিক প্রকাশনার প্রয়োজনীয়তা এবং প্রিডেটরি প্রকাশনার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে, ‘চাকরি পদোন্নতির জন্য জার্নাল নয়, চাই বিজ্ঞান গবেষণার বিশুদ্ধ প্রকাশ’ শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় একটি মতামত লিখি। এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহায়তা করেন প্রথম আলোর প্রিয় মুনির ভাই। সামার স্কুল ছিল ভারতের ন্যাশনাল ইয়াং একাডেমী এবং বাংলাদেশ একাডেমী অব সায়েন্সের সাথে একটি যৌথ আয়োজন। এই ইভেন্টটি ছিল আমার খুব পছন্দের। প্রফেসর জাহিদ হাসানের মাধ্যমে আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন ড সামি মিত্র, এডিটর, ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস। খুব অল্প সময়ে সামি মিত্রের সাথে আমার অত্যন্ত ভালো একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে। সামার স্কুল আয়োজনে সবচেয়ে বেশী সহায়তা পেয়েছিলাম বিজ্ঞান একাডেমীর অধ্যাপক হাসিনা ম্যাডাম, অধ্যাপক তফাজ্জল স্যার এবং কলকাতার ড. শ্রীপর্ণা চ্যাটারজির কাছ থেকে। ভালো কাজের মধ্য দিয়ে অসমবয়সী মানুষের মধ্যে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে তা এককথায় অতুলনীয়। বছরব্যাপী বিভিন্ন কাজের মধ্যে সমচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী ছয়জনকে ন্যাশনাল ইয়াং একাডেমি অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আউটস্ট্যান্ডিং ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড ২০২১ প্রদান। এই স্কিমটি তৈরির জন্য আমি আর ড. সাব্রিনা নাছোড়বান্দা ছিলাম, এ বিষয়ে বিশেষ সহায়তা পেয়েছিলাম আমার শিক্ষক ড. কাম্রুল হাসান মামুনের কাছ থেকে। 

২০২২ সালে বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সে আমি ৮টি কিনোট এবং ইনভাইটেড স্পিচ দিয়েছিলাম। জানি না আর কখনো এক বছরে এতগুলো স্পিচ দিতে পারবো কি-না।  আমার গ্রুপ থেকে এ বছর সাতটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় ছিল এ বছর শুধু বুয়েটের এফিলিয়েসন দিয়ে আমারা রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির গোল্ডেন ক্যাটাগরির জার্নাল ‘ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ গধঃবৎরধষং ঈযবসরংঃৎু ঈ’ তে আমাদের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করতে পেরেছিলাম। ২০২২ সালে আমার তত্ত্বাবধানে একজন ছাত্র পিএইচডি এবং দুইজন এমএসসি ডিগ্রী সম্পন্ন করে।  এ বছর আমার ছাত্ররা বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সে ১২ টি অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।  এ বছর বুয়েটে সায়েন্স ফ্যাকাল্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। সায়েন্স ফ্যাকাল্টি থেকে একটি কনফারেন্স আমরা আয়োজন করি এবং এই কনফারেন্স ভালভাবে সম্পন্ন করার জন্য আরও কয়েকজন সহকর্মীর সাথে আমিও মুখ্য ভূমিকা পালন করি। 

বছরের একদম শেষ দিকে অধ্যাপক জাহিদ হাসানের একটি সেমিনার আয়োজন করি। উক্ত সেমিনারে প্রায় ১৫০ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নিয়েছিল। উক্ত সেমিনার আয়োজনে বুয়েটের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য স্যারদের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছিলাম। ২০২২ সালে বছরজুড়ে আমার পরিবারের সাথে অনেকগুলো ট্রিপ দিয়েছিলাম, করোনাকালের বন্দী সময়ে ট্রিপ দিতে পারি নাই, এটি পুষিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল এবং বান্দরবন ট্রিপ আমাদের সীমাহীন আনন্দ দিয়েছিল। এ বছরের অক্টোবর মাসে ‘ইন্সিটিউট অব ফিজিক্স, ইউকে’ থেকে আমাকে ফেলো নির্বাচিত করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে একটি সার্টিফিকেট এবং একটি কার্ড পেয়েছি। এত সুন্দর  একটি সার্টিফিকেট দেখে মনে হলো জীবন অনেক সুন্দর। একই সাথে সুন্দর পরিবার, সহকর্মী, বন্ধু, ছাত্রসহ চারপাশের মানুষ। ফিরে দেখা ২০২২। ফেসবুক থেকে